Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

নিরাপদ বেগুন চাষ

নিরাপদ বেগুন চাষ
প্রফেসর ড. মো. সদরূল আমিন (অব:)

বেগুন বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় সবজি। সারা বছরই এর চাষ করা যায়। নিরাপদ বেগুন চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- জাত ও জাতের বৈশিষ্ট্য, বালাই দমন ও সার প্রয়োগ। যা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল। বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক জাতের বেগুন পাওয়া যাবে। যেমন- পটলা, ঝুপি, তারাপুরী, কাজলা,  ইসলামপুরী  নয়নতারা, খটখটিয়া, শিংনাথ এসব স্থানীয়, স্থানীয় উন্নত, বারি ও হাইব্রিড জাত সারা দেশে সারা বছর চাষ হয়। বাংলাদেশে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগের তীব্রতার বিবেচনায় বেগুনের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। বেগুনের জাতভিত্তিক রোগ ও পোকা আক্রমণের তীব্রতা সারণি : ১ দ্রষ্টব্য।    
চারা উৎপাদন ও সার প্রয়োগ
জমি তৈরি : আগাছা বেছে মাটি তৈরি করতে হয়। শীতকালীন বেগুন আগস্ট-অক্টোবর ও বর্ষাকালীন জানুয়ারি-এপ্রিলে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয়। ২৫ গ্রাম বীজ ৩ বর্র্গ মি. বীজতলায় বুনতে হয়। বীজতলায় ৫০ মেস নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায় ভাইরাস রোধ করা যায়। গজানোর   ১০-১২ দিন পর চারা দ্বিতীয় বীজতলায়  লাগাতে হয়। চারার বয়স ৩০-৪০ দিন অথবা   ৪-৬টি পাতা হলে রোপণ করতে হবে।      
সার : জাতের ফলন ক্ষমতা ও অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার দিতে হবে। সারের পরিমাণ সারণি-২ দ্রষ্টব্য। গাছে অপুষ্টি লক্ষণ দেখে সার ও চুন  প্রয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বেগুনের রোগ  দমন ব্যবস্থাপনা  
গোড়া পচা, ঢলেপড়া ও ক্ষুদে পাতা রোগ : গোড়া পচা দমনের জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঢলেপড়া রোগ ও খাটো আকৃতির পাতা রোগ দমনে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকনাশক এবং ভাইরাস বাহক সাদামাছি ( ইমিটাফ/নাইট্রো প্রয়োগ) দমন করতে হবে।    
ফমপসিস রোগ (
Phomopsis) : ফমপসিস রোগ দমনে বীজ শোধন করার জন্য গরম পানিতে ( ৫১ডিগ্রি সে) ১৫ মিনিট রাখা, অটোস্টিন ০.১ গ্রাম/৫০ গ্রাম বীজ, মূূল জমিতে অটোস্টিন ১০ গ্রাম/৫লিটার পানি স্প্রে করতে হবে।
ডেম্পিং অফ বা চারা ধ্বসা/ঢলে পড়া রোগ : বীজতলায় ‘ডেম্পিং অফ’ ছত্রাক রোগের আক্রমণ হয়। চারার কাণ্ড ও শিকড়ে  রোগ ছড়িয়ে চারা  মারা যায়। রোভরাল (২ গ্রাম/লি) বা কম্প্যানিয়ন (২ গ্রাম/লি) ৮ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে। অটোস্টিন  দিয়ে  বীজ শোধন করতে হবে ।    
বেগুনের পোকা
ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, মেলিবাগ, বিটল, সাদা মাছি ও জেসিড। এসব পোকা দেখা গেলে যথানিয়মে ট্রেসার ২টি স্প্রে তারপর  মারশাল এই চক্র অনুসরণ করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।     
বেগুনের ডগা ও ফলের মাজরা পোকা : এই পোকার আক্রমণ অধিক হলে এই পোকা দ্বারা সর্বাধিক ৬৩% পর্যন্ত ফলন ক্ষতি হতে দেখা গেছে। বেগুন ছাড়াও এ পোকা টমেটো, আলু, মটরশুটি ইত্যাদি সবজিকেও আক্রমণ করতে পারে (বারি)। ফল বিস্বাদ, খাওয়ার অনুপোযুক্ত হয়ে যায়। বেগুনের ডগা ও ফল মাজরা পোকা গাছে মাটি থেকে নেয়া পানি চলাচল ব্যহত হয় এবং ডগা, পাতা ঢলে পড়ে মারা যায়। ছিদ্রের মুখে কীড়ার মল দেখা যায়।  গাছে ফুল ধরতে বিলম্ব হয়। ক্রীড়া ফুলের কুঁড়ি এবং পরে বৃতির মাধ্যমে বর্ধনরত ফলের মধ্যে প্রবেশ করে। বর্ধনরত ফল আক্রান্ত হলে তাতে ছিদ্র দেখা যায়। বেগুনের এই একটি পোকা দমন করতে ১-২টি ফসল মৌসুমে গড় দৈনিক হিসাবে শতাধিক বার অতি বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করার উদাহরণ রয়েছে। অথচ বায়োলজিক্যালি অতি কম বিষাক্ত ট্রেসার প্রয়োগ করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তা দমন করা সম্ভব।
ট্রেসার মার্শাল প্রয়োগ : চারা রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে জমিতে মথ দেখার সাথে সাথে ট্রেসার ১০ লিটার পানিতে ৪ মিলি হারে স্প্রে করতে হবে। জমিতে লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ডগা অপসারণ করে একই হারে পুনরায় ট্রেসার প্রয়োগ করতে হবে। এর ৭-১০ দিন পর মার্শাল ২০ ইসি ১০ লিটার পানিতে ৩০ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। রোপণের কয়েক দিন পর থেকেই এ পোকার আক্রমণ হয় এবং শেষ ফলটি সংগ্রহ করার আগ পর্যন্ত এর আক্রমণ চলতে থাকে। গ্রীষ্মকালে জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ২০-৩০ দিন এবং শীতকালে ৩৪-৪৫ দিন লাগে। বছরে এরা ৫ বা বেশি বংশবিস্তার করতে পারে। মে-অক্টোবর ৩টি বংশ এবং নভেম্বর-এপ্রিল মাসের মধ্যে ২টি বংশবিস্তার হয়। স্ত্রী মথ পাতার উল্টো দিকে, কুঁড়িতে, বোঁটায় ও ডগায় ডিম পাড়ে। গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-৮ দিনে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়।    

 

সারণি ১ : জাতভিত্তিক রোগ ও পোকা আক্রমণের তীব্রতা

জাত ঢলেপড়া রোগ রোধ ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকারোধ
উত্তরা সহনশীল মাঝারিরোধক
তারাপুরী প্রতিরোধক প্রতিরোধক নয়
কাজলা সহনশীল মাঝারিরোধক
নয়নতারা মাঝারিরোধক মাঝারিরোধক
ইসলামপুরী মাঝারিরোধক প্রতিরোধক নয়
শিংনাথ মাঝারিরোধক মাঝারিরোধক
খটখটিয়া মাঝারিরোধক মাঝারিরোধক
ভাংগুরা মাঝারিরোধক প্রতিরোধক নয়


সমম্বিত বালাই দমন  
বেগুন ক্ষেতে প্রতি সপ্তাহে পোকার উপস্থিতি যাচাই করতে হবে। আক্রান্ত ডগা ও  ফল কীড়াসহ ছিঁড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নিরাপদ বেগুন উৎপাদনে ব্যাগিং ও অর্গানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বেগুনের জমি গভীরভাবে চাষ-মই দিয়ে সমান করে আগাছামুক্ত করতে হবে। বেগুনের জমি স্বল্প ব্যয়ে আগাছামুক্ত রাখতে চাইলে চারা রোপণের ২-৩ দিনের মধ্যে মাটিতে পানিডা ৩৩ ইসি বিঘাতে ৩০০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির শেষ চাষে কার্বোটাফ ৫জি ১.৫ কেজি/বিঘা দিতে হবে। সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া অতিরিক্ত দেয়া যাবে না। রোপণের ১৫ দিন থেকে সপ্তাহে একদিন ক্ষেতে জরিপ করতে হবে। ক্ষেত আগাছানাশক (পানিডা) দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুল আসার আগে ডগা বা পাতায় পোকা দেখলে পোকা ধ্বংস করাসহ বালাইনাশক দিতে হবে।

 

নিরাপদ বেগুন চাষে কিছু বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন। যেমন : হরমোন (বায়োজাইম/ওকোজিম)। তরল জৈবসার। শিকড় অধিক বিস্তৃত হয়। ফলের আকার ও ওজন বাড়ে। ফুল ধরার সময় ১ বার, ১ম স্প্রে করার ২১ দিন পর এবং ৪২ দিন পর ¯েপ্র করতে হবে। মিরাকেল গ্রো/বায়োলিনফা/জোবস/সুপার থ্রাইব/বুস্ট পেক রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ১০-১৫ দিন পরপর ৪-৫ বার দিলে বিঘাপ্রতি ১৫-২৫ মিলি প্রয়োজন হয়। রোগা গাছে হরমোন দেওয়া যাবে না। ভিজা চটে বেশি সময় সতেজ থাকে।     


বেগুন ছায়ায় রাখলে গরমকালে ১-৩ দিন ও শীতে ৩-৫ দিন সতেজ থাকে। ১৩ সেন্ট্রিগ্রেড তাপে ও ৯০% আর্দ্রতায় ২৫ দিন রাখা যায়     

সারণি ২ : উফশী জাতে সার

সারের নাম পরিমাণ/টব পরিমাণ/হেক্টর
গোবর/ কম্পোস্ট ১.৫ কেজি, ১০,০০০ কেজি
ইউরিয়া ৪০ গ্রাম ৩০০ কেজি
টিএসপি ৪০ গ্রাম ২৫০ কেজি
এমওপি ৩০ গ্রাম ২০০ কেজি
জিপসাম ৬ গ্রাম ১০০ কেজি
বোরিক এসিড (বোরন) - ১০ কেজি


বীজ উৎপাদনে করণীয়
পরিপক্ব ফল হলদে হলে সংগ্রহ করা। সপ্তাহপর ফলের চামড়া ছিলে বীজসহ মাংসল অংশ কেটে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  রোদে শুকিয়ে আর্দ্রতা ৮% হবে।     
পরিশেষে বিটি বেগুন ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ যা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে। বিটি (ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস) ব্যাকটেরিয়া থেকে জিনকে পৃথক করে বেগুনে স্থানান্তর করা হয়। এই জিন বেগুনে পোকানাশক প্রোটিন তৈরি করে যা ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকাকে প্রতিরোধ করে। বারি জাত, ছিদ্রপোকা-ট্রেসার, সুষম সার দ্বারা এভাবে বেগুন চাষ করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।


হাজী মো. দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর। মোবাইল : ০১৯৮৮৮০২২৫৩, ই- মেইল : Sadrulamin47@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon